মেট্রোরেলে যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে কিউআর কোডযুক্ত কাগজের টিকেট চালু হচ্ছে
মেট্রোরেলে যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে নতুন উদ্যোগ কাগজের টিকিটে কিউআর কোড
ঢাকা শহরের ব্যস্ত জীবনে মেট্রোরেল এখন অপরিহার্য। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একক যাত্রার টিকিটের সংকট যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে—কাগজের টিকিটে কিউআর কোড চালু করা। এটি শুধুমাত্র যাত্রীসেবা উন্নত করবে না, বরং টিকিট ব্যবস্থাপনাকেও সহজ করবে।
টিকিট সংকটের কারণ এবং বর্তমান পরিস্থিতি
মেট্রোরেলের একক যাত্রার প্লাস্টিক কার্ড বর্তমানে সংকটে। ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, হাতে থাকা ৩০ হাজার কার্ড দিয়ে যাত্রী চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জানুয়ারির শেষে আরও কিছু কার্ড আসার সম্ভাবনা থাকলেও সেটিও সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়।
টিকিট সংকটের পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করেছে। অনেক যাত্রী টিকিট স্যুভেনির হিসেবে রেখে দিয়েছেন। কেউ কেউ ফিরতি যাত্রার জন্য একাধিক কার্ড কিনেছেন কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার না করায় কার্ডগুলো আর ফেরত দেননি। এর পাশাপাশি অনেক টিকিট ব্যবহারজনিত কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।
নতুন কাগজের টিকিট: কীভাবে কাজ করবে?
টিকিট সংকট সমাধানে ডিএমটিসিএল কাগজের টিকিটে কিউআর কোড চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এই টিকিটে থাকবে একটি স্ক্যানযোগ্য কিউআর কোড, যা যাত্রীরা প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় স্ক্যান করবেন।
কাগজের টিকিট ব্যবহারে কিছু বিশেষ সুবিধা থাকবে:
- সহজলভ্যতা: এই টিকিট কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব।
- একদিনের ব্যবহারের উপযোগিতা: কিউআর কোড নির্দিষ্ট দিনে কার্যকর থাকবে, ফলে অন্যদিন এটি ব্যবহার করা যাবে না।
- পরিবেশবান্ধব: কাগজের টিকিট ব্যবহারে প্লাস্টিক বর্জ্য কমবে।
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, প্রতিটি স্টেশনে আলাদা স্ক্যানিং মেশিন ও প্রবেশপথ স্থাপন করা হবে। এ ধরনের টিকিট অনেক দেশে ব্যবহৃত হয় এবং এটি সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব।
যাত্রীসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন
কাগজের টিকিট চালু হলে স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার প্রয়োজন হবে না। প্লাস্টিক কার্ডের সংকট কমবে, এবং বিকল্প হিসেবে যাত্রীরা সহজেই কাগজের টিকিট কিনতে পারবেন।
এছাড়া কাগজের টিকিটের সঙ্গে প্লাস্টিকের টিকিটও চলমান থাকবে। এটি যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের বিকল্প প্রদান করবে। যারা নিয়মিত যাত্রী, তারা এমআরটি কার্ড ব্যবহার করবেন, আর যারা অনিয়মিত, তারা কাগজের টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ডিএমটিসিএলের দৃষ্টিভঙ্গি এবং যাত্রীদের প্রতি আহ্বান
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সাময়িক এই অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা আশাবাদী, ডিসেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।
এছাড়া কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে স্টেশনে আসার এবং টিকিট ব্যবহারে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডিএমটিসিএল ইতোমধ্যে কাগজের টিকিট সংগ্রহের লক্ষ্যে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দেড় মাসের মধ্যেই এই নতুন সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন ব্যবস্থাটি যদি সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে এটি মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক ও যাত্রীবান্ধব করবে।
মেট্রোরেলের কাগজের টিকিটে কিউআর কোড চালুর উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে যাত্রীদের জন্য একটি স্বস্তির খবর এবং মেট্রোরেল সেবায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। বর্তমান টিকিট সংকট মেটাতে এই উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। যাত্রীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা যেমন কমবে, তেমনি পুরো টিকিট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে। কাগজের টিকিট সহজলভ্য হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা খুব সহজেই এটি সংগ্রহ করতে পারবেন, যা প্লাস্টিক টিকিটের সংকট থেকে মুক্তি দেবে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধুমাত্র বর্তমান সমস্যার সাময়িক সমাধানই হবে না, বরং এটি দীর্ঘমেয়াদে যাত্রীসেবা ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত এবং প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলবে। কিউআর কোড স্ক্যান করে যাত্রী প্রবেশ ও নির্গমন সম্পন্ন করতে পারবেন, যা মেট্রোরেলের যাত্রার সময় আরও নিরবচ্ছিন্ন করবে। বিশেষ করে, যেসব যাত্রী নিয়মিত ভ্রমণ করেন না, তাদের জন্য এটি একটি সুবিধাজনক বিকল্প হবে।
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একদিকে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন আনা হচ্ছে, অন্যদিকে টিকিট সংগ্রহ সহজ করে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা আরও সুখকর করা হচ্ছে। এ উদ্যোগ ঢাকার ব্যস্ত শহরে মেট্রোরেলকে আরও কার্যকর এবং জনপ্রিয় পরিবহন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। যাত্রীদের কাছ থেকেও এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন, কারণ নতুন পদ্ধতির কার্যকারিতা তাদের সমর্থন ও ব্যবহারিক অংশগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল।