| |

সরকারি চাকরিতে পুরুষদের জন্য ৩৫ এবং নারীদের জন্য ৩৭ বছর বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সুপারিশ: পুরুষদের জন্য ৩৫ এবং নারীদের জন্য ৩৭ বছর

দীর্ঘদিনের আন্দোলন এবং কর্মসূচির পর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে নতুন করে সুপারিশ এসেছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁদের কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে পুরুষদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং নারীদের জন্য ৩৭ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, তাঁরা অবসরের বয়স নিয়ে কোনো প্রস্তাব দেননি। সোমবার সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা সাধারণত ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এই বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে এই বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিন ধরে চাকরিপ্রত্যাশীদের একাংশ করে আসছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সেশনজট এবং করোনা মহামারির কারণে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি আরও জোরালো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ৩০ সেপ্টেম্বর একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে, যার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।

পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, নারীদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৭ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের সরকারি চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই বিশেষ সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে অনেক নারী পরিবার ও অন্যান্য সামাজিক দায়িত্বের কারণে শিক্ষাজীবন শেষ করতে কিছুটা দেরি করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের জন্য দুই বছর অতিরিক্ত সময়ের সুযোগ দেওয়া হলে, তাঁদের সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি চাকরিতে পুরুষদের জন্য ৩৫ এবং নারীদের জন্য ৩৭ বছর বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব

চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসে। গত কয়েক বছর ধরে চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ ৩৫ বছর পর্যন্ত বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। শিক্ষার্থীদের সেশনজট, করোনার প্রভাব এবং অন্যান্য কারণে অনেকেই ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই চাকরিতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। এই কারণে আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, বয়সসীমা বাড়ানো সময়ের দাবি। এই দাবিতে বিভিন্ন সময়ে শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভও হয়েছে।

সম্প্রতি, কয়েক শ চাকরিপ্রত্যাশী ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভে অংশ নেন এবং তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনেও অবস্থান নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করতে হয়। তবে চাকরিপ্রত্যাশীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের দাবি পেশ করেন এবং অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যালোচনা কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই কমিটি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে পর্যালোচনা করে সরকারকে সুপারিশ দিয়েছে।

পর্যালোচনা কমিটির এই সুপারিশের ভিত্তিতে খুব শিগগিরই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার ঘোষণা শিগগিরই আসতে পারে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। বিশেষ করে চাকরিপ্রত্যাশী এবং শিক্ষার্থীরা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার নানা জটিলতা এবং সামাজিক পরিস্থিতির কারণে ৩০ বছরের মধ্যে চাকরিতে প্রবেশ করা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। ফলে, বয়সসীমা ৩৫ বছর করলে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমবে এবং তাঁরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারবেন।

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নারীদের জন্য ৩৭ বছর বয়সসীমার প্রস্তাব আরও বেশি নারীকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে উদ্বুদ্ধ করবে। এখন অপেক্ষা শুধু সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের।

Similar Posts