| |

বিসিএস পরীক্ষা এখন সর্বোচ্চ ৪ বার দেওয়া যাবে

বিসিএসে অংশ নেওয়ার সুযোগ বাড়ল: এখন সর্বোচ্চ ৪ বার পরীক্ষা দেওয়া যাবে

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৪ বার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। সাম্প্রতিককালে প্রার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বের সিদ্ধান্তটি সংশোধন করা হয়েছে।

সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ কী?

কয়েকদিন আগে উপদেষ্টা পরিষদের আরেকটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কোনো প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তবে এ সিদ্ধান্তে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে। দেশের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তাদের মতে, প্রার্থীদের জন্য তিনবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত করা হলে অনেকেই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হতে পারেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টাগণ পূর্বের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেন এবং শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে নতুন করে চারবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাবটি অনুমোদন করেন।

চারবার অংশগ্রহণের নতুন নিয়মাবলী

নতুন নিয়ম অনুসারে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ চারবার অংশ নিতে পারবেন। তবে, এই সীমা শুধুমাত্র ৪৭তম বিসিএস থেকে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, যারা পূর্ববর্তী বিসিএস পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এই গণনা প্রযোজ্য হবে না। নতুন এই নিয়ম শিক্ষার্থীদের জন্য একদিকে যেমন আরও বেশি সুযোগ এনে দিচ্ছে, অন্যদিকে বিসিএস পরীক্ষা ব্যবস্থায় একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো তৈরি করতে সহায়ক হবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর

দেশের সিভিল সার্ভিসে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে প্রচুর সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতি বছর বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। একজন প্রার্থীর কেরিয়ার গঠনে বিসিএস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা বাংলাদেশে সরকারী চাকরি পাওয়ার অন্যতম সেরা সুযোগ হিসেবে বিবেচিত। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে একজন প্রার্থী সহকারী কমিশনার, সহকারী পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেতে পারেন।

এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা একাধিকবার দেওয়ার সুযোগ কমিয়ে তিনবার করা হলে অনেক শিক্ষার্থী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতেন। কেননা বিসিএস পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রস্তুতি দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যাপক হওয়া প্রয়োজন, যা অনেক প্রার্থী এক বা দুইবারের চেষ্টায় অর্জন করতে পারেন না। ফলে নতুন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, চারবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলে তারা তাদের প্রস্তুতিকে আরও উন্নত করে সাফল্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন।

বয়সসীমা বাড়ানোর উদ্যোগ

বিসিএসে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি, চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩২ বছর করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং শিক্ষাজীবনে বিলম্বের কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করতেই দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন। ফলে বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে ধরা দিয়েছে।

এর ফলে যারা বিভিন্ন কারণে সিভিল সার্ভিসে অংশগ্রহণ করতে পারেননি কিংবা প্রস্তুতি নিতে সময় ব্যয় করেছেন, তারা কিছুটা বাড়তি সুযোগ পাবেন তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।

ভিন্নমত ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

তবে অনেকেই মনে করেন, বিসিএসে অংশ নেওয়ার সংখ্যা চারবার না হয়ে পাঁচবার বা এমনকি কোনো লিমিট না রাখাই উচিত। এ বিষয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। বিশেষত, প্রার্থীদের একাংশ বিশ্বাস করেন, সিভিল সার্ভিসে অংশগ্রহণের সুযোগে কোনো সীমা না থাকলে তারা তাদের দক্ষতা ও মেধার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবেন। এ নিয়ে ধারণা করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে যখন রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখন তারা নিজেদের স্বার্থে পরীক্ষার সংখ্যা বা অংশগ্রহণের সীমা আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন। আপাতত চারবারের সীমা নির্ধারণ করা হলেও, ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে বলে অনেকের ধারণা।

শিক্ষাবিদদের প্রতিক্রিয়া

সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষ শিক্ষাবিদ ও ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা একে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। তাদের মতে, বিসিএস পরীক্ষায় সফল হতে হলে একজন প্রার্থীকে শুধু বই পড়ে প্রস্তুতি নিলেই চলবে না; বরং বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রাসঙ্গিক বিষয়েও গভীর জ্ঞান থাকা আবশ্যক। চারবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকায় এখন শিক্ষার্থীরা আরও আত্মবিশ্বাসীভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবেন এবং তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার স্তরও বাড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, কারণ বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সরকারি চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। বারবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকার মাধ্যমে একজন প্রার্থী তার প্রথম পরীক্ষার ভুলগুলো থেকে শিখতে পারেন এবং পরবর্তীতে আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারেন।”

শেষ কথা

উপদেষ্টা পরিষদের এই নতুন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এতে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ আরও উন্মুক্ত হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রেও নতুন আশা তৈরি হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

তবে ভবিষ্যতে পরীক্ষার সুযোগ সংখ্যা পরিবর্তনের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। আপাতত চারবারের সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকলেও, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে এটি আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Similar Posts