|

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ, বিসিএস দেওয়া যাবে সর্বোচ্চ তিন বার

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সর্বোচ্চ তিনবার

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে চাকরি থেকে অবসরের বয়স অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগের মতোই বিদ্যমান নিয়ম অনুসারে কর্মীরা নির্ধারিত বয়সে অবসরে যাবেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার সুযোগ পাবেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের বিস্তারিত জানানো হয়।

দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বয়সসীমা বাড়ানোর

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। অনেক শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশী বিশেষভাবে করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট ক্ষতির কথা উল্লেখ করে দাবি জানিয়েছিলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো প্রয়োজন। মহামারির সময় উচ্চশিক্ষায় বিলম্ব হওয়ায় অনেকের জন্য চাকরির সুযোগ কমে গিয়েছিল। ফলে প্রার্থীরা সরকারের কাছে বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য বারবার আবেদন করেন।

সরকারের গঠিত পর্যালোচনা কমিটি এই দাবিগুলো পর্যালোচনা করে একটি সুপারিশ পেশ করেছিল। কমিটি পুরুষ প্রার্থীদের জন্য ৩৫ বছর এবং নারী প্রার্থীদের জন্য ৩৭ বছর বয়সসীমা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়। তবে তারা চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে মত দিয়েছিল।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত

পর্যালোচনা কমিটির গঠন

সরকার গত ৩০ সেপ্টেম্বর বয়সসীমা বাড়ানোর দাবির বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, যিনি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কমিটি বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে জানায়, বয়সসীমা বাড়ানো হলে অনেক বেশি প্রার্থী সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবে, যা সরকারি চাকরির প্রক্রিয়াকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করবে।

বিদ্যমান বয়সসীমা ও নতুন নিয়ম

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য সাধারণ বয়সসীমা ৩০ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটার জন্য সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর নির্ধারিত। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিসিএসসহ সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর করা হবে। বিসিএসের বাইরের অন্যান্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও এই বয়সসীমা প্রযোজ্য হবে। স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ নিয়োগ নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বয়সসীমা সমন্বয় করবে।

প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ভিন্ন নিয়ম

তবে প্রতিরক্ষা খাত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগ নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই বিভাগগুলোতে আগে থেকে যেসব বয়সসীমা কার্যকর ছিল, সেগুলোই বহাল থাকবে।

শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান

এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের সময় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। পূর্ববর্তী সরকার মনে করেছিল, বয়সসীমা বাড়ালে নতুন প্রার্থীদের তুলনায় পুরোনো প্রার্থীরা বেশি সুবিধা পাবেন এবং তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যেতে পারে। সেই কারণেই তারা বয়সসীমা ৩০ বছরের বেশি করতে রাজি ছিল না।

তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চাকরিপ্রার্থীদের দাবি এবং চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের মতে, এই পরিবর্তন প্রার্থীদের জন্য বেশি সুযোগ তৈরি করবে এবং দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে।

এই নতুন নিয়মের ফলে চাকরিপ্রত্যাশীরা বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিতে আবেদন করার জন্য আরও সময় পাবেন, যা প্রতিযোগিতাকে বাড়াবে এবং প্রশাসনে দক্ষ প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Similar Posts