এক সপ্তাহেই বাড়ল ১০টির বেশি পণ্যের দাম: শীর্ষ ১০ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্লেষণ
এক সপ্তাহেই বাড়ল ১০টির বেশি পণ্যের দাম: সুলভে ১০ পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার
নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় আরও চাপে ফেলে দিয়েছে। চাল, আটা, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ৭ থেকে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে ১২টি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির তালিকা তুলে ধরা হলো।
পণ্যের দাম বিশ্লেষণ
নীচে গত সপ্তাহের দাম এবং বর্তমানে পণ্যের দামের একটি তুলনামূলক চার্ট দেওয়া হলো:
পণ্য | আগের দাম (প্রতি ইউনিট/কেজি) | বর্তমান দাম (প্রতি ইউনিট/কেজি) | মূল্যবৃদ্ধি (টাকা) |
---|---|---|---|
ডিম (ডজন) | ১৬৫ টাকা | ১৮০–২০০ টাকা | ১৫–৩৫ টাকা |
আলু (কেজি) | ৬৫ টাকা | ৭৫ টাকা | ১০ টাকা |
পেঁয়াজ (কেজি) | ১১০ টাকা | ১২০ টাকা | ১০ টাকা |
গরুর মাংস (কেজি) | ৬৮০-৭০০ টাকা | ৭৫০ টাকা | ৫০-৭০ টাকা |
সয়াবিন তেল (লিটার) | ১৭০ টাকা | ১৭৪ টাকা | ৪ টাকা |
পাম তেল (লিটার) | ১৬২ টাকা | ১৬৬ টাকা | ৪ টাকা |
রাইস ব্র্যান অয়েল (লিটার) | ১৬৫ টাকা | ১৭০ টাকা | ৫ টাকা |
রসুন (কেজি) | ২১০ টাকা | ২৪০ টাকা | ১০ টাকা |
কাচা মরিচ (কেজি) | ৩০০-৩৫০ টাকা | ৪০০-৪৫০ টাকা | ১০০ টাকা |
জিরা (কেজি) | ৮৫০ টাকা | ৯০০ টাকা | ৫০ টাকা |
এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য এটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডিমের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি
ডিম হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য প্রোটিনের অন্যতম প্রধান উৎস। কিন্তু গত এক সপ্তাহে ডিমের দাম নতুন করে ডজনপ্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় উঠেছে। কিছু কিছু আড়ত ডিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ডিমের দাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেশ কিছু জায়গায় ডিম পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি
দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসে এটি মোট ৪ টাকা বেড়েছে। পাম তেলের দামও একই ভাবে লিটারে ৪ টাকা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বাজারেও এ বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে।
পেঁয়াজ ও আলুর দাম বৃদ্ধি
পেঁয়াজ ও আলুর দামও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ১২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মানুষের রান্নার খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সময়ে আলুর দামও ১০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৭৫ টাকা হয়েছে, যা বেশির ভাগ মানুষের জন্যই বাড়তি ব্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধি
গরুর মাংসের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ টাকায় পৌঁছেছে। পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য গরুর মাংস অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য, তবে এই দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
শাকসবজির দাম বাড়ার কারণ
যদিও টিসিবির তালিকায় শাকসবজির দাম উল্লেখ থাকে না, তবুও বাজার ঘুরে দেখা গেছে যে বর্তমানে শাকসবজির দাম সবচেয়ে বেশি চড়া। একেকটি শাকের আঁটি ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ সবজির দাম ৮০ টাকা থেকে শুরু হয়ে কোনো কোনো সবজি ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের পদক্ষেপ ও বিশ্লেষক মতামত
বাজারের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক ও কর কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে দেরিতে, ফলে এর তাত্ক্ষণিক সুফল পাওয়া যাবে না। নজরদারি না বাড়ালে বাজার পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি, ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নতুন সরবরাহ পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে, যেখানে ডিম সরাসরি খামার থেকে বাজারে আসবে।
সুলভে ১০ পণ্য বিক্রির উদ্যোগ
সরকার সুলভ মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির জন্য একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় রাজধানীর ২০টি জায়গায় ট্রাক সেলের মাধ্যমে আলু, পেঁয়াজ, ডিম, সবজি ইত্যাদি বিক্রি করা হবে। এতে করে ভোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পণ্য | মূল্য (টাকা) |
---|---|
আলু | ৩০ টাকা |
ডিম | ১৩০ টাকা (ডজন) |
পেঁয়াজ | ৭০ টাকা |
পেঁপে | ২০ টাকা |
শাকসবজি | ৫০ টাকা (প্যাকেজ) |
প্রাথমিকভাবে, রাজধানীর ২০টি জায়গায় ট্রাক সেলের মাধ্যমে সুলভমূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করা হবে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হবে এবং তাদের ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব হবে। এই উদ্যোগটি চালু করার জন্য ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে ট্রাক সেল পরিচালিত হবে। নিচে সেই ২০টি স্থানের তালিকা দেওয়া হলো:
- সচিবালয় এলাকার খাদ্য ভবন
- মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ
- মিরপুর-১০
- বাসাবো
- বছিলা
- রায়ের বাজার
- রাজারবাগ
- মুগদা উত্তর
- মুগদা দক্ষিণ
- পলাশী মোড়
- হাজারীবাগ
- মোহাম্মদপুর
- গাবতলী
- মহাখালী বাসস্ট্যান্ড
- বেগুনবাড়ি
- উত্তর খান
- দক্ষিণ খান
- কামরাঙ্গীরচর
- রামপুরা
- জিগাতলা
এই সব স্থানে ট্রাক সেলের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যগুলো বিক্রি করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সুলভমূল্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে চায়। তবে, ভবিষ্যতে এই কার্যক্রমের সফলতা নির্ভর করবে বাজার পরিস্থিতি ও সঠিক নজরদারির ওপর। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটি বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে বাস্তবায়ন ও বাজারে সঠিক নজরদারির ওপর।