|

পিএসসির উদ্যোগে ৪৪তম, ৪৫তম ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে বিশেষ পদক্ষেপ

পিএসসির সিদ্ধান্ত: ৪৪তম, ৪৫তম ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণে বিশেষ পদক্ষেপ

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাম্প্রতিক সময়ে ৪৪তম, ৪৫তম এবং ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষাসহ নন-ক্যাডার পরীক্ষার মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, ন্যায্য ও নিরপেক্ষ করার জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুনভাবে দায়িত্ব নেওয়া চেয়ারম্যান এবং কমিশনের ৮ জন সদস্য একত্রে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। পরীক্ষার ফলাফলের যথার্থতা, স্বচ্ছ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পিএসসির এসব উদ্যোগ ভবিষ্যতে সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আরও উন্নত ও সঠিক পরীক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পিএসসি মনে করে, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কেবল পরীক্ষার্থীদের আস্থার জন্যই নয়, বরং দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্যও অপরিহার্য। ৪৪তম বিসিএস থেকে শুরু করে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত পরীক্ষা পরিচালনা এবং ফলাফল প্রকাশের প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং ফলাফল প্রকাশ নিয়ে চলমান বিতর্ক এড়াতে সহায়ক হবে।

৪৪তম বিসিএস: মৌখিক পরীক্ষার সময় বৃদ্ধি

৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১,৭০৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১,৩৬৩ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। ১৮ জুন ২০২৪ তারিখে এই মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে তা ২৪ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এই পরীক্ষার মূল্যায়ন সমাপ্তির পর, ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে এবং কোনো ধরনের বিতর্ক এড়াতে, আগের নিয়ম মেনে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

৪৫তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের মাধ্যমে মূল্যায়ন

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে পিএসসি একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্রগুলোর দ্বিতীয় পরীক্ষকের মূল্যায়ন প্রায় সম্পন্ন হলেও, তা পুনর্মূল্যায়নের জন্য তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়মে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ন্যায্য মূল্যায়নের জন্য এ পদক্ষেপ বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট ২,৩০৯ জন ক্যাডার এবং ১,০২২ জন নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে চিকিৎসা ক্যাডারে ৫৩৯ জন, শিক্ষা ক্যাডারে ৪৩৭ জন এবং প্রশাসনে ২৭৪ জনসহ অন্যান্য বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হবে।

৪৬তম বিসিএস: ফলাফল পুনঃমূল্যায়ন

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল ২০২৩ সালের ৯ মে প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষায় ১০,৬৩৮ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হলেও, সম্ভাব্য বৈষম্যের কারণে আরও প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করা হবে। পিএসসি এ বিষয়ে প্রার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করতে এবং ফলাফলের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিসিএসে ৩,১৪০টি পদে নিয়োগের কথা রয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সর্বাধিক নিয়োগ দেওয়া হবে (১,৬৮২ জন সহকারী সার্জন এবং ১৬ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন)।

নন-ক্যাডার পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা

বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং অন্যান্য নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যও পিএসসি বিশেষ আলোচনা করেছে। পরীক্ষার ফাঁস এবং অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য বিশেষ নীতি প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

কমিশনের লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং নির্ভুল করার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। ৪৪তম, ৪৫তম ও ৪৬তম বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনগুলো পরীক্ষার্থীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। নতুন সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতের বিসিএস এবং অন্যান্য সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার মান উন্নয়নে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

উপসংহার

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের এই নতুন পদক্ষেপগুলো দেশের পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পিএসসির এই প্রয়াস দেশের চাকরিপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে।

৪৪তম, ৪৫তম ও ৪৬তম বিসিএস - পিএসসির প্রেস বিজ্ঞপ্তি
৪৪তম, ৪৫তম ও ৪৬তম বিসিএস – পিএসসির প্রেস বিজ্ঞপ্তি

এই প্রতিবেদনের তথ্য উৎস: পিএসসির প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

Similar Posts