| | |

সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব: ৩৫ বছরে প্রবেশ, ৬৫ বছরে অবসর, না ৩২ ও ৬০ বছরে ?

সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব: ৩৫ বছরে প্রবেশ, ৬৫ বছরে অবসর নিয়ে আলোচনা

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বাংলাদেশ প্রশাসনিক সেবা সংস্থা থেকে উত্থাপিত এই প্রস্তাবটি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

বয়সসীমায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা

বর্তমান চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর এবং অবসরের বয়স ৫৯ বছর, যা অনেকের মতে আধুনিক জীবনধারার সাথে খাপ খাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা এখন অনেক সময় নিয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করছে এবং অনেককে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজও করতে হচ্ছে। এই কারণে শিক্ষাজীবন শেষে চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেকের দাবি, বয়সসীমা পরিবর্তন করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রেরিত একটি চিঠিতে, যুগ্ম সচিব মো. সাজ্জাদুল হাসান উল্লেখ করেছেন, “সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ এবং অবসরের বয়স ৬৫ করার একটি প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে, যা এখনো পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে।”

সমালোচনা এবং বিকল্প মতামত

প্রস্তাবটি সর্বজনীন সমর্থন পায়নি। যেমন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সর্জিস আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, “বাংলাদেশে ৩৫ বা ৬৫ বছর বাস্তবসম্মত নয়। ৩২ বছর প্রবেশের জন্য এবং ৬০ বছর অবসরের জন্য উপযুক্ত হতে পারে।”

সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব: ৩৫ বছরে প্রবেশ, ৬৫ বছরে অবসর, না ৩২ ও ৬০ বছরে ?
সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব: ৩৫ বছরে প্রবেশ, ৬৫ বছরে অবসর, না ৩২ ও ৬০ বছরে ?

সর্জিস আলমের এই বক্তব্য নতুন এক বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। কেউ কেউ প্রবেশ এবং অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে থাকলেও, অনেকেই এর মাঝারি সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন। প্রস্তাবের সমর্থকরা বলছেন, দেরিতে পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশের বয়স বাড়ানো উচিত, বিশেষ করে যাঁরা অসচ্ছল পরিবার থেকে আসেন।

তবে বিরোধীরা বলছেন, অবসরের বয়স বাড়ালে নতুন প্রজন্মের জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত হবে এবং সরকারের অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে, কারণ পেনশনের খরচ বাড়তে পারে এবং নতুন কর্মী নিয়োগের হার কমে যেতে পারে।

পটভূমি ও প্রতিবাদ

সরকারি চাকরির বয়সসীমা নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। গত দশক ধরে এ নিয়ে আলোচনা চললেও উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। এ বছরের শুরুর দিকে শাহবাগে একটি গ্রুপ চাকরিপ্রত্যাশী ৩৫ বছরের প্রবেশ বয়সের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। তাদের দাবি, অনেক শিক্ষার্থী একাডেমিক এবং আর্থিক সমস্যার কারণে সময়মতো পড়াশোনা শেষ করতে পারছে না।

বিক্ষোভকারীরা উল্লেখ করেছেন যে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো অন্যান্য দেশে সরকারি চাকরির প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর বা তারও বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা মনে করেন, বাংলাদেশকেও এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শিক্ষাজীবন শেষ করে সুষ্ঠুভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে।

সরকারি প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ

সরকার এই দাবির বিষয়ে সচেতন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রস্তাবটির সুবিধা ও অসুবিধা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রস্তাবটি এখনো পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি নিয়ে জনমনে আলোচনা চলছে।

তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীর জন্য এই প্রস্তাবের ফলাফল তাদের ভবিষ্যৎ চাকরির সম্ভাবনায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিষয়টি এখনো সমাধান হয়নি এবং এ নিয়ে বিক্ষোভ ও সংস্কারের দাবি চলতেই থাকবে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ করার প্রস্তাবটি এখনো পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, শিক্ষার্থীরা দেরিতে পড়াশোনা শেষ করায় এই পরিবর্তন তাদের জন্য সহায়ক হবে, অন্যদিকে অনেকে এর বিরোধিতা করছেন এবং সরকারের আর্থিক চাপের বিষয়টি উল্লেখ করছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো গৃহীত হয়নি, তবে এটি চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

Similar Posts