৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে

৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পদ নির্ধারণের প্রস্তুতি চলছে

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জানিয়েছে, ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে। পদসংখ্যা সম্পর্কে এখনও নির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও, তা শিগগিরই নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে পিএসসির ক্যাডার শাখা। পিএসসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা চলছে এবং নতুন বিসিএস পরীক্ষার জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

পিএসসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একটি স্বনামধন্য পত্রিকাকে বলেন, ‘৪৭তম বিসিএস নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ৪৭তম বিসিএসের সার্বিক দায়িত্ব দেখভালের জন্য একজন সদস্যকে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিসিএসের ক্ষেত্রে একজন সদস্য সার্বিক সমন্বয়ের কাজ করে থাকেন। এবার আমরা আগেভাগেই দায়িত্ব দিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেছি, যাতে পুরো প্রক্রিয়াটি নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা যায়।’

৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় নিয়ে জানতে চাইলে স্বনামধন্য পত্রিকাকে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) জানান, ‘আমরা যে সময় সাধারণত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকি, সেই সময়েই ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। তবে আমরা আশা করছি, এবার বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে অন্যান্য ধাপগুলোর সময়সূচি নির্ধারিত থাকবে, যাতে পুরো প্রক্রিয়াটি সঠিক সময়ে সম্পন্ন করা যায়।’

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)

পিএসসির মহাপরিকল্পনা: সময় কমিয়ে আনার উদ্যোগ

৪৭তম বিসিএসকে ঘিরে পিএসসি এবার বেশ বড় ধরনের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়াটিকে নির্ধারিত ক্যালেন্ডার মেনে পরিচালনা করা হবে। বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষা পর্যন্ত সবকিছুর সময়সূচি আগেই নির্ধারিত করা হবে। পিএসসি এবার সময় কমিয়ে আনার মহাপরিকল্পনা শতভাগ প্রয়োগ করতে চায়, যাতে পরীক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যকে পরিকল্পনা ঠিক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই ৪৭তম বিসিএসের পদসংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। পিএসসি ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ থেকে চাহিদাপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে। পদের সংখ্যা নির্ধারিত হলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

৪৬তম বিসিএসের তথ্য ও ফলাফল

৪৬তম বিসিএসের প্রক্রিয়া থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী বিসিএসগুলোর প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসি ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ বছর ৯ মে অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হন ১০,৬৩৮ জন প্রার্থী। এ পরীক্ষায় মোট ২,৫৪,৫৬১ জন প্রার্থী অংশ নেন, যেখানে অনুপস্থিত ছিলেন ৮৩,৪২৫ জন। উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ।

৪৬তম বিসিএসে মোট ৩,১৪০টি পদ ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদ ছিল স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এই ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সহকারী সার্জন পদে ১,৬৮২ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ১৬ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারে বিভিন্ন বিষয়ে ৫২০ জন নিয়োগের জন্য মনোনীত হবে। পিএসসি এবার এই বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সময়সূচি নির্ধারণের ওপর জোর দিচ্ছে।

৪৫তম বিসিএস: লিখিত পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশের প্রস্তুতি

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের কাজ প্রায় শেষের পথে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জানিয়েছে, দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠানোর কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন দ্রুত তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠানো হবে, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা যায়। প্রায় সাত মাস আগে ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

৪৫তম বিসিএসে মোট ২,৩০৯ জন ক্যাডার এবং ১,০২২ জন নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসা ক্যাডারে, যেখানে সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জন নিয়োগ পাবেন। চিকিৎসা ক্যাডারের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক নিয়োগ হবে শিক্ষা ক্যাডারে, যেখানে মোট ৪৩৭ জন নিয়োগ পাবেন। এছাড়া, পুলিশে ৮০ জন, কাস্টমসে ৫৪ জন এবং প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত হয় এবং প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল গত বছরের ৬ জুন প্রকাশ করা হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ৭৮ হাজার ৮০৩ জন, যা ৭৭.২৪ শতাংশ উপস্থিতির হার নির্দেশ করে। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১২,৭৮৯ জন প্রার্থী, যারা পরবর্তী ধাপে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।

লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করতে পিএসসি তৎপর রয়েছে। পিএসসির একজন কর্মকর্তা জানান, ‘দ্বিতীয় পরীক্ষকের খাতা মূল্যায়নের কাজ শেষ হয়েছে প্রায়। এখন তা যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হবে। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল যথাসময়ে প্রকাশ করা যায়।’

৪৭তম বিসিএস: আরও সংগঠিত ও পরিকল্পিত

৪৭তম বিসিএসকে আরও সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করতে পিএসসি বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে, প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষার তারিখসহ পুরো প্রক্রিয়ার সময়সূচি আগেভাগেই নির্ধারণ করা হবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো বিসিএস প্রার্থীদের অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা।

পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চাই, ৪৭তম বিসিএস হবে এমন একটি বিসিএস, যার সবকিছু ক্যালেন্ডার মেনে চলবে। আমরা সময় কমিয়ে আনার মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি এবং আশা করি, প্রার্থীদের জন্য এটি একটি মাইলফলক হবে।’

৪৭তম বিসিএসের জন্য পদসংখ্যা নির্ধারণ প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তবে পিএসসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে খুব দ্রুতই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তথ্য সুত্র

Similar Posts