| | |

আদালতের রায়ে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হলেন বিএনপির শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপির শাহাদাত হোসেনকে ঘোষণা আদালতের

তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছে আদালত। আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. খাইরুল আমীন এই রায় দেন। আদালত একই সঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম. রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পান মাত্র ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। তবে এই নির্বাচনে কারচুপি, অনিয়ম ও ইভিএমের প্রিন্ট কপি না দেওয়ার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন শাহাদাত হোসেন।

শাহাদাত হোসেনের করা মামলার শুনানিতে আদালত বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। আদালত আরও নির্দেশনা দেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে। এই রায়ের ফলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

আদালতের রায়ে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হলেন বিএনপির শাহাদাত হোসেন
আদালতের রায়ে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হলেন বিএনপির শাহাদাত হোসেন

মামলার পটভূমি

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে কারচুপি ও ফলাফল বাতিলের দাবিতে চসিকের সাবেক মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শাহাদাত হোসেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিমকে জয়ী দেখানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা প্রতারণা ও অসাধু পন্থা অবলম্বন করেন।

নির্বাচনের দিন চসিকের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ইভিএমের প্রিন্ট কপি সরবরাহ করা হয়নি। বরং হাতে লেখা ফলাফল দেওয়া হয়, যা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের আদর্শের পরিপন্থী। এতে ভোটারদের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হয় বলে দাবি করেন শাহাদাত হোসেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও ফলাফলে ২২ শতাংশ ভোট পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়, যা নির্বাচনে কারচুপির সুস্পষ্ট প্রমাণ।

মামলার বিবাদীদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মেয়র রেজাউল করিম, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, নির্বাচন কমিশনের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আরও পাঁচজন। তাঁদের বিরুদ্ধে শাহাদাত হোসেনের অভিযোগ, তাঁরা পরস্পরের যোগসাজশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি ও অনিয়ম ঘটিয়েছেন। এ কারণেই নির্বাচন বাতিল করে শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করার জন্য আদালতে আবেদন করেন তিনি।

আদালতের রায় ও প্রতিক্রিয়া

আজকের এই রায় ঘোষণার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন এবং শাহাদাত হোসেনকে অভিনন্দন জানান। এই রায়ে শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশের মানুষ খুশি হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি নেতারা।

আদালতের রায়ের পর শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “এই রায়ে চট্টগ্রামসহ দেশের ১৮ কোটি মানুষ খুশি হয়েছেন। যাঁরা আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে ভোট দিতে পারেননি, এই রায়ে তাঁদেরও জয় হয়েছে।”

শাহাদাত হোসেনের আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া জানান, আদালত এই রায়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারচুপির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছে। এই রায়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা হলো। আদালতের রায়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা নতুন মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেনের দায়িত্বগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করবে।

পেছনের ঘটনা

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন প্রায় ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। কিন্তু ভোটের দিনে নানা হামলা, গোলাগুলি, প্রাণহানি ও ক্ষমতাসীনদের শক্তি প্রদর্শনের কারণে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ভোটের কোনো নিরপেক্ষতা ছিল না এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই আদালতে মামলা করেন শাহাদাত হোসেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক নেতা শাহাদাত হোসেনকে ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে ভোটের পর থেকে তিনি নির্বাচনের ফলাফল ও প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। আজ আদালতের রায়ে তাঁর আপত্তির যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

আদালতের এই রায়কে কেন্দ্র করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এরপর শাহাদাত হোসেন সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ আপিল করতে পারে বলে জানা গেছে।

Similar Posts