সংকটে থাকা চার ব্যাংক পেল ৯৪৫ কোটি টাকা সহায়তা
তারল্য সংকটে থাকা চার ব্যাংক পেল ৯৪৫ কোটি টাকা সহায়তা: বর্তমান ব্যাংকিং খাতের সংকট আরও গভীর
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে চলমান তারল্য সংকট মোকাবিলায় চারটি ব্যাংক সম্প্রতি ৯৪৫ কোটি টাকার সহায়তা পেয়েছে। অতিরিক্ত তারল্য থাকা কিছু ব্যাংক ঋণ হিসেবে এই সহায়তা প্রদান করেছে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, এই ঋণের গ্যারান্টার হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনেয়ারা শিখা এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
কোন কোন ব্যাংক পেল এই সহায়তা?
তারল্য সহায়তা পাওয়া চার ব্যাংক হলো – ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো সাম্প্রতিক সময়ে তারল্য সংকটে ভুগছিল, যা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করছিল।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক তিনটি ব্যাংক থেকে মোট ৩০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা পেয়েছে। এই তিনটি ব্যাংক হলো সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।
এদিকে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা পেয়েছে সিটি ব্যাংক এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।
ন্যাশনাল ব্যাংক চারটি ব্যাংক মিলে ঋণ সহায়তা পেয়েছে। এই ব্যাংকগুলো হলো সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবং ইস্টার্ন ব্যাংক।
ব্যাংক খাতের সংকট: কেন প্রয়োজন এই সহায়তা?
বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এক বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক ব্যাংকেই জমা রাখা টাকার পরিমাণ কমে গেছে, ফলে তাদের ঋণ বিতরণে সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তারল্য সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক এমন একটি চুক্তি করেছে, যার আওতায় অতিরিক্ত তারল্য থাকা ব্যাংকগুলো সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসবে।
সাম্প্রতিক এই সহায়তার মূল কারণ হলো গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। তারল্য সংকটে ভোগা ব্যাংকগুলো তাদের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে এবং ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সচল রাখতে পারছিল না। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঋণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে চেষ্টা করছে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে।
সাম্প্রতিক ব্যাংক খাতের অন্যান্য সংকট
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সংকটে ভুগছে। মূলত ঋণ পুনরুদ্ধারে সমস্যা, খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি, এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার অভাব এসব সংকটের মূল কারণ। কিছু ব্যাংক ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়েছিল, যা পরবর্তীতে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। এতে করে তাদের তারল্য সংকট তীব্র হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সমস্যাগুলো পুরোপুরি সমাধান করা যায়নি। অনেক ব্যাংকেই মূলধনের ঘাটতি রয়েছে, এবং তারল্য সঙ্কটের কারণে তারা নতুন ঋণ বিতরণে অপারগ। এর ফলে অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সংকট উত্তরণের প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরণের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, ঋণ বিতরণে সতর্কতা, এবং গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হতে পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ। বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এছাড়া, অতিরিক্ত তারল্য থাকা ব্যাংকগুলোকে সংকটময় মুহূর্তে সহায়তা প্রদান চালিয়ে যেতে হবে। তবে, এই ঋণ সহায়তা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনা দক্ষতা এবং ঋণ আদায় প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে, যাতে তারা নিজে থেকে তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।
সাম্প্রতিক ৯৪৫ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা সংকটময় ব্যাংকগুলোর সাময়িকভাবে স্বস্তি এনে দিলেও, ব্যাংক খাতের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আরও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ প্রয়োজন। গ্রাহক আস্থা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করাই হতে পারে ব্যাংক খাতকে সংকটমুক্ত করার একমাত্র উপায়।