সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮০ শতাংশ: প্রবাসী আয়ে বিশাল প্রবৃদ্ধি
প্রবাসী আয়ে বিশাল প্রবৃদ্ধি: সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮০ শতাংশ, রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইতিবাচক প্রভাব
দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে এক উল্লেখযোগ্য উত্থান দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ে ৮০ শতাংশের অভাবনীয় বৃদ্ধি ঘটেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এক বিশাল সাফল্য। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে প্রবাসীরা প্রায় ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৮,০৮৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। এই প্রবৃদ্ধি এক ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় যা বছরের শুরুতে কমে গিয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় পুনরায় বাড়লেও চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় কিছুটা কম। জুন মাসে প্রবাসী আয় ছিল প্রায় ২৫৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা একক মাস হিসেবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। তবে, আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত আগস্টে প্রবাসীরা প্রায় ২২২ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। আর এর আগের জুলাই মাসে, ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে, বৈধ পথে আয় পাঠানো কমে দাঁড়ায় প্রায় ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলারে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠানো কমিয়ে দেন।
তবে আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রবাসী আয় পুনরায় বাড়তে শুরু করে। ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটানোর জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে, ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের দাম ১১৭ থেকে সর্বাধিক ১২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারছে ব্যাংকগুলো। এর ফলে প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন ডলারের কিছুটা বেশি দাম দিতে পারছে, যা প্রবাসীদের বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করছে। এছাড়া, জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় না পাঠানোর যে প্রচারণা ছিল, তাতে পরিবর্তন এসেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রচারণায় সাড়া দিয়ে অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন, যার ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে।
প্রবাসী আয়ের এই বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসে ৬৩ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৬৫ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছে। পাশাপাশি, বিদেশি ব্যাংকগুলো থেকে এসেছে প্রায় ৬২ লাখ ১০ হাজার ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে মোট প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার ডলার বা প্রায় ৬.৫৪ বিলিয়ন ডলার।
বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রবাসী আয়ের এই বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে, বছরের শেষে মোট প্রবাসী আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটি হবে একক বছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসার রেকর্ড। প্রবাসী আয়ে এই অগ্রগতি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রবাসী আয়ের এই ধারাবাহিকতা খুবই প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। ডলারের বিনিময় হারের সুবিধা এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।