| |

দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ টাকায় বৃদ্ধি

বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ টাকা এবং সুযোগ বৃদ্ধি

প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছেন। তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা মজবুত করতে এবং দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ঋণ সুবিধা চালু করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক নীতি বিভাগ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, বৈধ উপায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীরা এখন দেশের ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এই নতুন উদ্যোগ প্রবাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুবিধা হিসেবে গণ্য হবে।

এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদেশে কর্মরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশিরা যারা বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠান, তারাই এই ঋণসুবিধার আওতায় আসবেন। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের পাঠানো বৈধ রেমিট্যান্সের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। এই সুবিধার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে অর্থ ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। তবে, সার্কুলারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রচলিত ব্যাংকিং নীতিমালা মেনে চলতে হবে।

এতদিন শুধুমাত্র উচ্চ আয়ের প্রবাসীদের গৃহনির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ দেওয়া হতো। তবে নতুন নীতিমালার আওতায় প্রবাসীরা যেকোনো প্রয়োজনীয় কাজে ঋণ ব্যয় করতে পারবেন। এর ফলে, প্রবাসীরা যেমন নিজেদের জীবনমান উন্নত করতে পারবেন, তেমনি তাদের পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহায়তা করতে সক্ষম হবেন। দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রেমিট্যান্স
রেমিট্যান্স

সম্প্রতি দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে এক উল্লেখযোগ্য উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ে ৮০ শতাংশের অভাবনীয় বৃদ্ধি ঘটেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিশাল এক সাফল্য। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে প্রবাসীরা প্রায় ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৮,০৮৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় পুনরায় বাড়লেও চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় কিছুটা কম। জুন মাসে প্রবাসী আয় ছিল প্রায় ২৫৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা একক মাস হিসেবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। তবে আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত আগস্টে প্রবাসীরা প্রায় ২২২ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা সেপ্টেম্বরে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলারে।

এই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখযোগ্য। ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের নতুন সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও উৎসাহিত করেছে। ব্যাংকারদের মতে, এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রচারণায় সাড়া দিয়ে অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন, যার ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৬৫ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। পাশাপাশি, বিদেশি ব্যাংকগুলো থেকেও এসেছে প্রায় ৬২ লাখ ১০ হাজার ডলার। এই প্রবৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। প্রবাসীদের জন্য এই নতুন ঋণসুবিধা চালুর মাধ্যমে সরকার তাদের বৈধ উপায়ে আরও বেশি পরিমাণে দেশে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করছে। নতুন ঋণ সুবিধা প্রবাসীদের বিভিন্ন আর্থিক চাহিদা মেটানোর সুযোগ দিচ্ছে, যা একদিকে তাদের পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে কাজ করবে এবং অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

প্রবাসী আয়ের এই বৃদ্ধি দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক, কারণ এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করে। প্রবাসীদের বৈধ উপায়ে অর্থ পাঠানোর অভ্যাস আরও জোরদার করতে এবং দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে নতুন এই ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রবাসীদের জীবনযাত্রার মান যেমন উন্নত হবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতে আরও প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হবে।

দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের জন্য ঋণ সুবিধার পরিধি বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রবাসীদের এই ঋণসুবিধা দেওয়ার ফলে তারা আরও সচেতনভাবে এবং নির্ভয়ে বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ আরও সুসংহত হবে, যা অর্থনীতির শক্তিশালীকরণে সহায়ক হবে।

Similar Posts