আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের উপর নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ নতুন উৎস খুঁজছে
বাংলাদেশের আলু ও পেঁয়াজ আমদানে ভারতের পরিবর্তে খুঁজছে নতুন বিকল্প দেশসমূহ
বাংলাদেশ সরকার আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং সরবরাহের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির সম্ভাবনা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে।
বৈচিত্র্যময় আমদানির পরিকল্পনা
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আলু ও পেঁয়াজ আমদানিকারক, উৎপাদক, পাইকার এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে প্রধানত বিকল্প আমদানির দেশসমূহ এবং সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভবিষ্যতে আরও বৈঠকের আয়োজনের সম্ভাবনাও আলোচনা করা হয়।
বর্তমান আমদানির পরিস্থিতি
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রধানত ভারত থেকে আলু আমদানি করছে, যেখানে পেঁয়াজ আমদানি ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন এবং তুরস্ক থেকেও করা হচ্ছে। তবে ভারতের আমদানির পরিমাণ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিটিটিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমানে আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের উপর নির্ভরতা উচ্চমানের।
বিকল্প দেশসমূহের সম্ভাবনা
বিটিটিসির প্রতিবেদনে আলু আমদানিতে জার্মানি, মিশর, চীন এবং স্পেনের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানিতে চীন, পাকিস্তান এবং তুরস্কের সম্ভাবনা রয়েছে। এই দেশগুলো থেকে আমদানির মাধ্যমে সরবরাহের স্থিতিশীলতা এবং দামের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
দাম বৃদ্ধির প্রভাব
ভারতে পেঁয়াজ ও আলুর দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ। বিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ভারতে পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০.৫৯% এবং আলুর দাম ৭.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এক বছরের তুলনায় পেঁয়াজের দাম ১৩১% এবং আলুর দাম ৩৪% বেড়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে বাংলাদেশ সরকারের বিকল্প উৎস খোঁজার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
সরবরাহের চ্যালেঞ্জ ও উদ্যোগ
বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খানের বক্তব্য অনুযায়ী, একাধিক উৎসের অভাবে সরবরাহে স্থিতিশীলতা আসবে এবং ঝুঁকি কমবে। হিলি স্থলবন্দর থেকে ভারতে পেঁয়াজের ট্রাকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিকল্প পথ খোঁজার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করলে খরচ এবং সময় উভয়ই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
চাহিদা ও সরবরাহের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন, যেখানে উৎপাদন ৩৯ লাখ টন। তবে সংরক্ষণকালীন ক্ষতি ও অন্যান্য কারণে প্রায় ৩০% পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন হয়। আলুর ক্ষেত্রে বার্ষিক চাহিদা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টন, স্থানীয় উৎপাদন ১০৬ লাখ টন হলেও সংরক্ষণকালীন ক্ষতি ও অন্যান্য কারণের ফলে আমদানির প্রয়োজন হয়।
বিশেষজ্ঞের মতামত
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “শুধু আলু ও পেঁয়াজ নয়, অন্যান্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও ভারতের বিকল্প উৎস খোঁজা প্রয়োজন। বিটিটিসির উদ্যোগকে আমরা সমর্থন করি এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।”
উপসংহার
বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে আলু ও পেঁয়াজ আমদানে বহুমুখী উৎস নির্ধারণের মাধ্যমে সরবরাহের স্থিতিশীলতা এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এর ফলে স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে এবং ভোক্তাদের সুবিধা নিশ্চিত হবে। ভবিষ্যতে অন্যান্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও বিকল্প উৎস খোঁজার মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মূল সংবাদসূত্র: প্রথম আলো