|

ভারতের উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মমতার উদ্বেগ: এবার নেপালকে দায়ী করলেন

দক্ষিণের পর এবার উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির জন্য নেপাল ও কেন্দ্রকে দায়ী করলেন মমতা

কলকাতা: রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে। দক্ষিণবঙ্গের ভয়াবহ বন্যার পর এবার উত্তরবঙ্গও বন্যার কবলে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নেপালের কৌশী নদীর অতিরিক্ত পানি ছাড়ার কারণে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর আগেই দক্ষিণবঙ্গের বন্যার জন্য দায়ী করেছিলেন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-কে। এখন একই ধরনের অভিযোগ তুললেন নেপাল ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে।

দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলো এখনো বন্যার পানিতে ডুবে আছে। এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতেও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। সামনেই পূজা, তার আগে এই বিপর্যয় পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। রাজ্যজুড়ে এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় একটি প্রশাসনিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, “গোটা পশ্চিমবঙ্গ আজ বন্যায় বিপর্যস্ত। আগে ডিভিসি-র ছাড়া পানিতে দক্ষিণবঙ্গ প্লাবিত হয়েছে। সরকারকে না জানিয়েই ৫ লাখ কিউসেকের বেশি পানি ছাড়ার কারণে বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রামের আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আর এখন নেপালের কৌশী নদী থেকে ৬ লাখ কিউসেক পানি ছাড়ার কারণে উত্তরবঙ্গ বিপর্যস্ত।”

ভারতে বন্যা (প্রতীকী ছবি)
ভারতে বন্যা (প্রতীকী ছবি)-ভারতে বন্যা সংবাদ । ইন্ডিয়া বন্যা পরিস্থিতি নিউজ।

তিনি আরও বলেন, “বন্যার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাংলাকে সবসময় বঞ্চিত করা হয়।” মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, গঙ্গা নদী চুক্তির পর গত বিশ বছর ধরে ফারাক্কায় কোনো ড্রেজিং হয়নি। তিনি বলেন, “যদি ফারাক্কায় ড্রেজিং হতো বা পলি সরানোর কাজ হতো, তবে ফারাক্কায় আরও ৪ লাখ কিউসেক পানি ধারণের ক্ষমতা থাকতো। তখন এত বড় সংকট তৈরি হতো না।”

এদিন বিকালে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী। যাওয়ার পথে দমদম বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের সামনে তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ডিভিসির মতো এবার নেপাল কৌশী নদীর পানি ছেড়ে দিয়েছে। ওই পানিটা বিহার রাজ্য হয়ে বাংলায় ঢুকছে। এর ফলে একদিকে ভুটানের সংকোশ নদীর পানিতে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি জেলা বিপর্যস্ত হয়েছে। আবার কৌশী নদীর পানিতে মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ওই সমস্ত এলাকার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”

কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুলে তিনি আরও বলেন, “গত ২০ বছর ধরে ফারাক্কায় কোনো ড্রেজিং হয় না। এর দায়িত্ব সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারের। আগে তারা ১২০ কিলোমিটার দেখভাল করত, এখন তারা মাত্র ২০ কিলোমিটার দেখভাল করে। এর ফলে গঙ্গা নদী বালি আর পলিতে ভরে যাচ্ছে, যেটা বন্যার প্রধান কারণ।”

ডিভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ডিভিসি সরকারকে না জানিয়েই অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়েছে। ফলে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার কবলে পড়েছে। এতে রাজ্যের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা বরাবর বলে আসছি যে, ডিভিসি-র পক্ষ থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে জানিয়ে পানি ছাড়া উচিত। কিন্তু তারা সেটা না করে নিজেদের খুশি মতো কাজ করছে।”

যদিও ডিভিসি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা পানি ছাড়ার বিষয়টি ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় রাজ্যকেই জানিয়েছিল। ডিভিসির এক কর্মকর্তা একটি চিঠি প্রকাশ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার জেলাগুলোকে সতর্ক করেছিল। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না, এটি সঠিক তথ্য নয়।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরেই বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “বন্যার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দায়ী। এটি তৃণমূলের ব্যর্থতা।” শুভেন্দু আরও বলেন, “যথাযথভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনা করলে এমন বিপর্যয় ঘটতো না। রাজ্য সরকারের অবহেলার কারণেই আজ রাজ্যের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবেলায় সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন জেলায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এবং ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে তা মোকাবিলা করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজ্যজুড়ে এমন বিপর্যয়ের জন্য শুধু ডিভিসি বা নেপালকে দায়ী না করে কেন্দ্রের উদাসীনতার বিরুদ্ধেও তিনি সরব হয়েছেন। “বাংলা বন্যা রোধের প্রাপ্য অর্থ থেকে সবসময় বঞ্চিত। এখনও পর্যন্ত কেউ খোঁজ নেয়নি, এক পয়সাও দেয়নি,” অভিযোগ করেন মমতা।

সাধারণ মানুষ এমন অবস্থায় দিশাহারা। বিশেষ করে পূজার আগমুহূর্তে এই পরিস্থিতি রাজ্যের উৎসবের পরিবেশকে ম্লান করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ও বিরোধী দলের পাল্টা অভিযোগের মাঝে রাজ্যের জনগণের কষ্ট আরও বাড়ছে। এখন দেখার বিষয়, এই সংকটের সমাধানে কেন্দ্র ও রাজ্য কত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

Similar Posts